সত্যিকারে জীবনের গল্প
সত্যিকারের জীবনের গল্প – সার্টিফিকেট: সময়টা ২০১৭। হাতে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে বসে আছে জিনিয়া। কিন্তু সে এবারও ফেল। এই নিয়ে মোট তিন তিন বার ফেল করল সে। চোখ দিয়ে তার টপটপ করে পানি পড়ছে। কষ্টে ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু সে কষ্ট প্রকাশ করার মতো ভাষা তার কাছে নেই। এ কষ্টের মাঝেই জিনিয়ার মা এসে মেয়ের অবস্থা দেখে ঝংকার দিয়ে উঠল।
জিনিয়ার মাঃ কি! এইবারও ফেল। শংখনী মান ইজ্জত যা ছিল সব শেষ কথা নিচু করে বসে আছে জিনিয়া। মায়ের এসব কথা নতুন নয়। গত দুই বছরেও একই কথা শুনতে হচ্ছে তাকে। ঠাসসস! গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকাল সে।
জিনিয়ার মাঃ তুই জীবনেও পাশ করতে পারবি না। এখন তোকে কে বিয়ে করবে? হায় হায় সমাজে মুখ দেখাতে পারব না তোর জন্য।
জিনিয়াঃ মা একটা সার্টিফিকেটই মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে না। আমি মানুষ হিসেবে কি আমার কোন মূল্য নেই? আজ যদি আমি পাশ করতাম তাহলে কি এই কথাগুলো বলতে পারতে।
জিনিয়ার মাঃ করলে বলতাম না। কিন্তু তুই তো করিসনি। এখন বর্তমান যুগে মেট্রিক পাশের কি মূল্য তুই জানিস! কোন জায়গায় মেয়ে দেখতে গেলে প্রথমে কি জিজ্ঞেস করে? মেয়ে কি পাশ? আর তোরে দেখতে এলে কি কমু তিন তিন বার মেট্রিক ফেল।
জিনিয়ার মা চলে গেল আরও কতগুলো কথা শুনিয়ে। জিনিয়ার বাবা এসে জিনিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল
জিনিয়ার বাবাঃ ভেবেছিলাম তুই পাশ করবি মা। কিন্ত না করিস নি। তোরা দুই বোনের পড়ালেখার খরচ যে আমি কত কষ্ট করে জোগার করতাম সেটা শুধুমাত্র আমিই জানি। এখন আমি যেটা বলব তোকে কিন্ত সেটাই শুনতে হবে।
জিনিয়া তার বাবাকে জরিয়ে ধরে হাউকাউ করে কেঁদে দিল
জিনিয়াঃ বাবা আমি পারলাম না। জানো বাবা আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্ত পাশ করতে পারলাম না। আমি কি করব বলোতো?
জিনিয়ার বাবা চলে গেল। জিনিয়া বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কালো মেঘটা কি ভাবে চোখের আড়ালে ঘায়েল হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ জোরে মেঘের গর্জন শুনা যাচ্ছে। এক দৃষ্টিতে প্রকৃতির খেলাগুলি দেখছে। তার জীবনটাও তো এরকমই। কি থেকে কি হয়ে গেল। একটা দমকা হাওয়া এসে সব কিছু তচনচ করে দিয়ে চলে গেল। চোখ দুটো ফুলে গেছে। আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না। বৃষ্টি একটু কমেছে।
বিকালে….
রুমে প্রবেশ করল জিনিয়ার মা একটা শাড়ী দিয়ে গেল। শুধু বলেছে তাড়াতাড়ি শাড়ীটা পড়তে। জিনিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর মা কি করতে চাইছে?
জিনিয়ার মাঃ কিরে শাড়ীটা এখনও পড়লি না।
জিনিয়াঃ শাড়ী পড়ব কেন?
আর কিছু বলতে না দিয়ে
জিনিয়ার মাঃ তোর রফিক কাকু একটা বড় ঘর নিয়ে এসেছে। ছেলে নাকি একবার বিয়ে করেছিল। একটা দুই বছরের বাচ্চা রেখে। বউটা চলে গেছে। এখন আবার বউ খুজছে। ইতালি থাকে। তোরে ওখানে নিয়ে যাইব।
No comments